ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

জাফর ইকবাল ‘টপ অফ দ্যা ওয়ান’ মারবেন না !

:: অরুন সরকার ::

লেখক ও সাংবাদিক, শাবিপ্রবি’র অধ্যাপক ড.মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন সাদামাটা মানুষ । যার খ্যাতি রয়েছে জনপ্রিয় একজন লেখক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে । তার কলমের লেখনিতে শুধু শিক্ষনিয় বিষয়ছাড়া আর কিছুই নেই । দেশ ও জনগণের স্বার্থে তার কলমের কালি এক অনন্য দৃষ্টান্ত । অথচ তার উপরে এ হামলা মেনে নেওয়ার নয় । যা দেশের গণমাধ্যমের পাশাপাশি এখন বিশ্বগণমাধ্যমেও এ ন্যাক্কারজনক ছুরি হামলার ঘটনার প্রতিবেদন ছেয়ে গেছে দেশ-বিদেশে । ঘটনার পরপরই দেশের সামজিক ও যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঝড় বইতে শুরু করে জাফর ইকবাল’র হামলার গল্পকাহীনিতে । এ খবর মূহুর্তের মধ্যেই হয়ে ওঠে  ‘টপ অফ দ্যা ওয়ান’ । যে বা যারাই ঘটনার সংবাদ জানতে পেরেছেন সাথে সাথে তারাই এ নিষ্ঠুর বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় এনে শাস্থি দাবি করছেন । জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাফর ইকবাল ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদি লেখক । দিকনের্দেশনামূলক তার প্রতিবাদের লেখার ভাষা ছিল সম্পন্ন আলাদা । সত্যকে প্রতিষ্টা করতে গিয়ে তিনি বার বার হুমকির সম্মূখিন হয়েছেন । কিন্তু তার সততা ও নিষ্টা কলমের কালি থামাতে পারেনি প্রাণনাশকারী হুমকিদাতারা । হয়তো অদূর ভবিষ্যতেও আমরা তার লেখাগুলো অনূসরন করবো । অবিরাম জঙ্গি- সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কলম চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। সেই বাস্তবতা আজ থাকে এ পর্যায় নিয়ে যাবে কেউ বুঝে ওঠতে পারেনি । শাবিপ্রবি এলাকায় তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে ভেবে ওঠতে গেলেও শরীর শিহরে ওঠে । এ কেমন পরিকল্পনা,এ কেমন নিষ্ঠুর বর্বরতা পুলিশি বেষ্ঠনি বেধ করে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছাত্র,ছাত্রী,শিক্ষকদের টপকিয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করা হয় । মুহুর্তের মধ্যে তিনি লুঠিয়ে পড়েন মাটিতে । তখন গোঠা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে ওঠে নির্বিকার । চারদিকে শুধূ হৈ,হুল্লুর স্যারকে বাঁচান,স্যারকে ধরেন,স্যারকে মেডিকেলে নিয়ে যান আর হামলাকারীকে ধরেন,তাকে আটক করেন । এযেন এক কারবালার প্রান্তর । তখন জাফর ইকবালের শরীরের রক্ত ছড়িয়ে ছিঠিয়ে এদিক-ওদিক ঝড় ঝড় করে পড়ছিল । ঘটনাস্থলে থাকা অনেক ছাত্র,ছাত্রী ও শিক্ষকরা তার এ অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলেন । অবশেষে তার স্থান হলো মেডিকেল’র সিংহাসনে । এদিকে সরেজমিনে থাকা ছাত্র/ছাত্রীরা সেই দুস্কৃতিকারীকে আটকিয়ে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করে । কিন্তু গতকাল শনিবার রাতে এ দুস্কৃতিকারীর ঞ্জান ফিরে আসলেও আজ রবিবার পর্য্যন্ত আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনার ক্লু পুরোপুরিভাবে বাহির করতে পারেনি । এদিকে দুস্কৃতিকারী জবানবন্ধি দিয়েছে ‘জাফর ইকবাল ইসলামের শত্রু, তাই হামলা’ । তাহলে ঘটনার সূত্রপাত কোন দিকে মোড় নিচ্ছে । প্রশাসন কি করতে চাইতেছে । কারন আমরা যদি একটু পিছনের দিকে ফিরে থাকায় তাহলে দেখতে পাই গত চার বছরে বাংলাদেশে প্রায় ডজনখানিক সেক্যুলার,ব্লগার,নাস্তিক লেখকদের খুন করা হয়েছে । এ ঘটনাও যে সেইরকম ঘটতে যাচ্ছিল তা বলার ওপেক্ষা রাখেনা। হামলার ঘটনা যে একইরকম নয় তাও একেবারে ফেলারমত নয় । তাহলে কে সেই দুস্কৃতিকারী । তার মূখোশ কেন খুলতে পারছেনা প্রশাসন । তার সাথে জড়িত কে বা কারা এখনও বাহির করতে পারেনি প্রশাসন । কার ইন্ধনে এ হামলা চালিয়েছে একজন সাদামাটা মানুষের উপর,কি এমন ক্ষতি করেছেন তিনি ? তবে সবচেয়ে বেশি হতবাক হওয়ার বিষয় পুলিশি নিরাপত্তা থাকা সত্তেও কেন এই হামলার শিকার হতে হল তাকে । নানান প্রশ্ন গুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে । যা আজ বিশ্বের দরবারে আমরা কলন্কের নীলিমার রেখায় আবদ্ধ রয়েই গেলাম । তাছাড়া এর পূর্বেও তাকে ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন মারফতে । এরমধ্যে অন্যতম হল ২০১৬সালের ১২অক্ঠোবর বুধবার জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিম শিক্ষক এ দম্পতিকে মুঠোফোনে হত্যার বার্তা পাঠিয়েছিল । সেখানে লেখা ছিল ‘welcome to Our new top list! Your breath may stop at anytime. ABT’।

ওই তারিখ রাত ২টা ৩১মিনিটে জাফর ইকবালের মুঠোফোনে খুদে বার্তায় লেখা ছিল ‘Hi Unbeliever! We will strangulate you soon’।

সেই ঘটনারপর সিলেট মহনগরের জালালাবাদ থানায় জাফর ইকবাল একটি সাধারন ডায়েরি করেন । এর পূর্বেও তাকে হত্যার হুমকি দেয় বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠন । এতকিছু জানারপরও প্রশাসনের টনক নড়েনি কেন। কি এমন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তার হামলার পেছনে । আজ তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন মেডিকেলের বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুধুমাত্র প্রশাসনের গাফলতির কারনে । এর আগেও তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার শিকার হন । তখন তার স্ত্রী আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান । তারপরেও কি প্রশাসন’র হাব-ভঙ্গি যায়নি ! সম্প্রতি তিনি শাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের চর্চায়ও তীব্র সমালোচনা করেন । এ হামলার ঘটনা তার ঈংগিত দিচ্ছে কি না তাও ভাবিয়ে তোলছে প্রশাসন ও সচেতন মহলকে,না এটা জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের হামলা কোনটি ! কোন চরমপন্থী ইসলামি গোষ্ঠির সঙ্গে এ দুস্কৃতিকারীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার বিষয় । ‘টপ অফ দ্যা ওয়ান’ হয়ে এখন তিনি মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শয্যাশায়ী রয়েছেন। এরকম ঘটনা যদি একেরপর এক ঘটে লেখক,ব্লগার ও মুক্তমনা লোকদের উপর তাহলে কলমের কালি যে থামবেনা তাও নয় । কারন সত্যকে ফুটিয়ে তোলতে গিয়ে যদি শিকার হতে হয় হামলার,ঘরে ফিরতে হয় লাশ হয়ে তাহলে তার ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার নয় সেটাও বলার ওপেক্ষা রাখেনা । তাই সরকার তথা এদেশের জনগণকে বুঝা উচিত মুক্তমনের মানুষকে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেয়া যাতে করে তারা দেশের মঙ্গল কামনায় স্বাধীনভাবে লেখালেখি করতে পারেন । সবশেষে বলব তাদের বাঁচিয়ে রাখেন,মারবেন না …………!

প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে পেছন থেকে অধ্যাপক জাফর ইকবালের মাথায় ছুরিকাঘাত করেন আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী ফজলূল নামের এক নরপশু যুবক। পরে তাকে শিক্ষার্থীরা ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন।

আর অধ্যাপক জাফর ইকবালকে উদ্ধার করে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর রাতেই সেনাবাহীনির একটি হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকায় পৌঁছেই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সিএমএইচে ভর্তি করানো হয়। এবং পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

অরুন সরকার, লেখক ও সাংবাদিক, মোবাইনং-০১৭১৩৩৯২৪৭৬

পাঠকের মতামত: